সংসার - সম + সার : বড্ড কঠিন এই দুটো শব্দ। যার মায়াজালে জড়িয়ে রয়েছি আমরা - হ্যাঁ , আমরা যারা কিনা সমাজের "সমাজ" নামক দুরারোগ্য ব্যাধির ফসল। আমরা যারা সংসারী মানুষ , যারা কিনা সামাজিক জীব তারা কি পারি এই ব্যাধির অক্টোপাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ? আমরা তো অবলা জীব মাত্র - যাকে ঘিরে রয়েছে মোহ , মুক্তি , প্রেম , ভালবাসা , দুঃখ , বেদনা , মূল্যবোধ , কর্তব্য প্রভৃতি আরো অনেক ভারী ভারী শব্দ। এই অক্টোপাসের নামই হল মায়া।
মায়া - যেকিনা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের পিছু ধাওয়া করে চলেছে। মায়া - প্রেম না ভালবাসা - এ প্রশ্নের উত্তর বড় কঠিন। একজন সন্যাসীর জীবন মায়াশুন্য , আবার যে মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে দৃষ্টির অন্তরালে , সে কি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছে ? হয়তো বা করেছে। কিন্তু তার প্রকৃত সত্যতা কোথায় ? কোথায় রয়েছে বন্ধন - এই বন্ধন ই হল এক বা একাধিকের সাথে জড়িয়ে পড়ার আসক্তি। কিন্তু এই মায়া - এযে বড় কঠিন জিনিস। রবীন্দ্র রচনাবলীতে এর পূর্ণফলন যেন আমরা প্রতিটি মুহূর্তেই পাই। সেই জমিদার বাড়ির মেয়ে এই মায়ার জালেই জড়িয়ে পড়ে এক স্বদেশীর ব্রাহ্মণত্ব কে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আবার "ঘরে বাইরে" র সন্দীপ হয়ত বা মোহের বশবর্তী হয়েই এই দৃড় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেটা কি শুধুই মোহ প্রদর্শন। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগেও কিন্তু এই মোহ মায়ার ধারা অব্যাহত। তবে এই মোহ কি আপেক্ষিক নাকি আধুনিকতার সাহায্য নিয়ে বলতে হয় তা প্রদর্শিত মাত্র। তাইতো আজকের নারী স্বাধীনতার পরবতী যুগেও ভোগ্য পণ্য - এর নাম কিন্তু আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খার জন্ম আবার মোহ থেকে। কাজেই মোহর অপর অর্থ বন্ধন। যে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমরা জড়িয়ে পড়ি সংসারের পাঁকে। কিন্তু এখানেই শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে - "সংসারে সং সেজে ঠেকতে হয়, পাকাল মাছের মত থাকতে হয়, সংসারে থেকেও সংসারের কাদা গায়ে মাখা যাবে না।" এই মায়াময় মোহময় পৃথিবীতে সকলেই আমরা এক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ।
পুরাণে দেখি , পাঞ্চালীও শেষপর্যায়ে পঞ্চপাণ্ডবের সাথে স্বর্গারোহণ করার সময় মায়ার বন্ধনেই পা পিছলে পরে যায়। কারণ , পাঞ্চালী যে সত্যের আলাপ করে মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। পাঁচ স্বামী থাকা সত্বেও অর্জুনের প্রতি পক্ষপাত দুষ্টে সে দোষী। আর কৌন্তেয় - যার কিনা দুহাত সমান চলে - সেই সব্যসাচী - যে সারা জীবন অন্যের খুশীর ভার নিজের কাঁধে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিল। এরই নাম মায়া। কুরুক্ষেত্রে সূতপুত্রের যবনিকা পতনের পর ও সেই দায়ভার অর্জুনকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে। মাতা কুন্তীর তার প্রতি কি নিদারুণ বিষোদ্গার - আমাদের মরমী মনকে নাড়া দিয়ে যায়। আবার যে যাজ্ঞসেনীর জন্য অর্জুনের সারা কাহিনী জুড়ে আত্মদংশন , তার মনেও কিন্তু রাধেরও প্রতি কোনো ব্যথিত হৃদয় উঁকি মারে। একই অর্জুনের পক্ষে লজ্জা নয় - এরই নাম মায়া। যার থেকে জন্ম নেয় প্রেম , ভালোবাসা ,অধিকার।
সেইযে একটা কথা আছে না - স্বাধীনতা ভাল কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ভাল নয়। ঠিক সেভাবেই বলতে হয় , মায়ার বশবর্তী হওয়া ভাল কিন্তু অন্ধ মায়ায় জড়িয়ে পড়া ভাল নয়। যার ফল আমরা দেখি - অষ্টাদশ দিবসের যুদ্ধের শেষে পুত্রস্নেহে অন্ধ নিঃসন্তান গান্ধারী অর্জুনের সারথী কৃষ্ণকে শাপশাপান্ত করছেন এই বলে যে , এমনি করেই একদিন কালের অতল তলে কুরুবংশের মত যদু বংশ অবলুপ্ত হয়ে যাবে। এরই নাম মায়া।
পুরাণের কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি বাস্তবে ফিরে আসি , তাহলেও দেখব - এই বিশ্ব সংসার মায়ার জালে আবদ্ধ। মায়া - এযে বড় কঠিন , আবার তার সাথে হৃদয় বিদারক বটে। তাইতো শরতবাবুর সতীশ সমাজের চোখে আড়াল করেও বার বার সাবিত্রীর কাছে ধরা পরে গিয়েছে। যার থেকে সতীশ আর শেষ অবধি বেরোতে পারেনি। হয়ত বা চায়ও নি। আমাদের মত সাধারণ জীবনে মায়ার বন্ধন ছিন্ন হলেই আমরা আশাহত হয়ে পড়ি। শিলং পাহাড়ে অমিত তার বংশ মর্যাদা ছেড়ে বেরিয়ে এসেও লাবণ্যর হাতছানিতে ধরা দিতে পারেনি। নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনা কলকাতার কেটি মিত্তিরের জগতের সাথে। তার থেকেই জন্ম নেয় অবসাদ। যার শিকার আজ ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রায় পঁচাত্তুর শতাংশ মানুষ। অবসাদের জন্ম হয় কিন্তু এই মোহমায়া থেকেই। নতুন বৌঠানের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ও মোহভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন , তার জীবনে নেমে এসেছিল অবসাদ। এই সম্পর্কই একসময়ে মায়ার বশবর্তী হয়ে পরে - যে মায়া আমাদের আবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সামাজিক সম্পর্ককে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি ? পারি কি ? - মায়ার বন্ধন , রক্তের বন্ধন , সম্পর্কের বন্ধনকে ছিড়ে বেরিয়ে আসতে। পারিনা , কারণ , আমরা যে সমাজবদ্ধ জীব - আমরা যে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। তাইতো আজ জীবনের দ্বিপ্রহরে এসে আমরা উপলব্ধি করি , যা যায় তা চলেই যায় - যা থাকার নয় তাকে আটকে রাখা যায় না। রাখালছেলের গাঁয়ের মটরশুঁটিও যে পা জড়িয়ে ধরে বলে - যেতে নাহি দেব / তবু যেতে দিতে হয় , তাইতো নিজেকে মোহমুক্ত করেই এগিয়ে যেতে হবে - এরই নাম জীবন। পিছিয়ে পড়লে চলবে না - এখনো যে অনেক কাজ বাকী।
যেকোনো রকম প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে দ্বিধা করবেন না। আমরা সর্বদা আপনাদের সহায়তায় সচেষ্ট।
আপনাদের মূল্যবান মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানাতে নিচে রিপ্লাই বক্সে কম্মেন্ট করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের পরবর্তী পোস্ট প্রকাশিত হলে আপডেট পাওয়ার জন্য। ফলো এবং লাইক করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তী পোস্ট নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি আপনাদের সামনে। ধন্যবাদ।
Please don’t hesitate to ask any question to let us know more about your requirements. We are always there to assist you to make you perform better.
মায়া - যেকিনা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের পিছু ধাওয়া করে চলেছে। মায়া - প্রেম না ভালবাসা - এ প্রশ্নের উত্তর বড় কঠিন। একজন সন্যাসীর জীবন মায়াশুন্য , আবার যে মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে দৃষ্টির অন্তরালে , সে কি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছে ? হয়তো বা করেছে। কিন্তু তার প্রকৃত সত্যতা কোথায় ? কোথায় রয়েছে বন্ধন - এই বন্ধন ই হল এক বা একাধিকের সাথে জড়িয়ে পড়ার আসক্তি। কিন্তু এই মায়া - এযে বড় কঠিন জিনিস। রবীন্দ্র রচনাবলীতে এর পূর্ণফলন যেন আমরা প্রতিটি মুহূর্তেই পাই। সেই জমিদার বাড়ির মেয়ে এই মায়ার জালেই জড়িয়ে পড়ে এক স্বদেশীর ব্রাহ্মণত্ব কে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আবার "ঘরে বাইরে" র সন্দীপ হয়ত বা মোহের বশবর্তী হয়েই এই দৃড় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেটা কি শুধুই মোহ প্রদর্শন। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগেও কিন্তু এই মোহ মায়ার ধারা অব্যাহত। তবে এই মোহ কি আপেক্ষিক নাকি আধুনিকতার সাহায্য নিয়ে বলতে হয় তা প্রদর্শিত মাত্র। তাইতো আজকের নারী স্বাধীনতার পরবতী যুগেও ভোগ্য পণ্য - এর নাম কিন্তু আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খার জন্ম আবার মোহ থেকে। কাজেই মোহর অপর অর্থ বন্ধন। যে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমরা জড়িয়ে পড়ি সংসারের পাঁকে। কিন্তু এখানেই শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের কথাটি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে - "সংসারে সং সেজে ঠেকতে হয়, পাকাল মাছের মত থাকতে হয়, সংসারে থেকেও সংসারের কাদা গায়ে মাখা যাবে না।" এই মায়াময় মোহময় পৃথিবীতে সকলেই আমরা এক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ।
পুরাণে দেখি , পাঞ্চালীও শেষপর্যায়ে পঞ্চপাণ্ডবের সাথে স্বর্গারোহণ করার সময় মায়ার বন্ধনেই পা পিছলে পরে যায়। কারণ , পাঞ্চালী যে সত্যের আলাপ করে মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। পাঁচ স্বামী থাকা সত্বেও অর্জুনের প্রতি পক্ষপাত দুষ্টে সে দোষী। আর কৌন্তেয় - যার কিনা দুহাত সমান চলে - সেই সব্যসাচী - যে সারা জীবন অন্যের খুশীর ভার নিজের কাঁধে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিল। এরই নাম মায়া। কুরুক্ষেত্রে সূতপুত্রের যবনিকা পতনের পর ও সেই দায়ভার অর্জুনকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে। মাতা কুন্তীর তার প্রতি কি নিদারুণ বিষোদ্গার - আমাদের মরমী মনকে নাড়া দিয়ে যায়। আবার যে যাজ্ঞসেনীর জন্য অর্জুনের সারা কাহিনী জুড়ে আত্মদংশন , তার মনেও কিন্তু রাধেরও প্রতি কোনো ব্যথিত হৃদয় উঁকি মারে। একই অর্জুনের পক্ষে লজ্জা নয় - এরই নাম মায়া। যার থেকে জন্ম নেয় প্রেম , ভালোবাসা ,অধিকার।
সেইযে একটা কথা আছে না - স্বাধীনতা ভাল কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ভাল নয়। ঠিক সেভাবেই বলতে হয় , মায়ার বশবর্তী হওয়া ভাল কিন্তু অন্ধ মায়ায় জড়িয়ে পড়া ভাল নয়। যার ফল আমরা দেখি - অষ্টাদশ দিবসের যুদ্ধের শেষে পুত্রস্নেহে অন্ধ নিঃসন্তান গান্ধারী অর্জুনের সারথী কৃষ্ণকে শাপশাপান্ত করছেন এই বলে যে , এমনি করেই একদিন কালের অতল তলে কুরুবংশের মত যদু বংশ অবলুপ্ত হয়ে যাবে। এরই নাম মায়া।
পুরাণের কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি বাস্তবে ফিরে আসি , তাহলেও দেখব - এই বিশ্ব সংসার মায়ার জালে আবদ্ধ। মায়া - এযে বড় কঠিন , আবার তার সাথে হৃদয় বিদারক বটে। তাইতো শরতবাবুর সতীশ সমাজের চোখে আড়াল করেও বার বার সাবিত্রীর কাছে ধরা পরে গিয়েছে। যার থেকে সতীশ আর শেষ অবধি বেরোতে পারেনি। হয়ত বা চায়ও নি। আমাদের মত সাধারণ জীবনে মায়ার বন্ধন ছিন্ন হলেই আমরা আশাহত হয়ে পড়ি। শিলং পাহাড়ে অমিত তার বংশ মর্যাদা ছেড়ে বেরিয়ে এসেও লাবণ্যর হাতছানিতে ধরা দিতে পারেনি। নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনা কলকাতার কেটি মিত্তিরের জগতের সাথে। তার থেকেই জন্ম নেয় অবসাদ। যার শিকার আজ ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রায় পঁচাত্তুর শতাংশ মানুষ। অবসাদের জন্ম হয় কিন্তু এই মোহমায়া থেকেই। নতুন বৌঠানের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ও মোহভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন , তার জীবনে নেমে এসেছিল অবসাদ। এই সম্পর্কই একসময়ে মায়ার বশবর্তী হয়ে পরে - যে মায়া আমাদের আবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সামাজিক সম্পর্ককে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি ? পারি কি ? - মায়ার বন্ধন , রক্তের বন্ধন , সম্পর্কের বন্ধনকে ছিড়ে বেরিয়ে আসতে। পারিনা , কারণ , আমরা যে সমাজবদ্ধ জীব - আমরা যে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। তাইতো আজ জীবনের দ্বিপ্রহরে এসে আমরা উপলব্ধি করি , যা যায় তা চলেই যায় - যা থাকার নয় তাকে আটকে রাখা যায় না। রাখালছেলের গাঁয়ের মটরশুঁটিও যে পা জড়িয়ে ধরে বলে - যেতে নাহি দেব / তবু যেতে দিতে হয় , তাইতো নিজেকে মোহমুক্ত করেই এগিয়ে যেতে হবে - এরই নাম জীবন। পিছিয়ে পড়লে চলবে না - এখনো যে অনেক কাজ বাকী।
Jayatee Banerjee
আপনাদের মূল্যবান মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানাতে নিচে রিপ্লাই বক্সে কম্মেন্ট করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের পরবর্তী পোস্ট প্রকাশিত হলে আপডেট পাওয়ার জন্য। ফলো এবং লাইক করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তী পোস্ট নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি আপনাদের সামনে। ধন্যবাদ।
Please don’t hesitate to ask any question to let us know more about your requirements. We are always there to assist you to make you perform better.
No comments:
Post a Comment