Visit Our Educational Blog

Visit Our Educational Blog
A WAY TO LEARN & IMPROVE YOUR SKILLS ONLINE

Sunday, June 17, 2018

পরমপুরুষ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ

ওঁ স্থাপকায় চ ধর্মস্য সর্বকর্মস্বরূপিণে ।।
অবতার বরিষ্ঠায় শ্রীরামকৃষ্ণায় তে নমোঃ।।
শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে দিন দিন মানুষের জানবার আগ্রহ বেড়েই চলেছে, শুধু বাংলা বা ভারতেই নয়, ভারতের বাইরের দেশেও তাঁর সম্বন্ধে লোকের কৌতূহল ক্রমবর্ধমান, এর কারণ - শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী ও সংলাপ এতটাই মর্মস্পর্শী এবং যুগোপযোগী যে লোকে আকৃষ্ট না না হয়ে পারে না। কিন্তু তাঁর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই বড় বড় পন্ডিতের বক্তৃতাও তাঁর বাণীকে আশ্রয় করেই। প্রতিটি কথার মূলসূত্র শ্রীরামকৃষ্ণ নিজেই। এইজন্য অনেকটা গঙ্গাজলের গঙ্গাপুজো। স্বামীজি ঠাকুরের ব্যাখ্যা করেছেন ঠিকই, কিন্তু খুবই সসংকোচে। তিনি বলতেন - "কি জানি ভয় হয় শিব গড়তে যদি বাঁদর গড়ি। " এমনই ছিল শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মহিমা।
ঐতিহাসিক উইলিয়াম ডিগবী র মতে - "ক্লান্ত বা অবসন্ন মানুষের কাছে ভগবানকে প্রকাশ করে দিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। ভগবান কি ; ভগবান লাভের আনন্দই বা কি; তিনি সেটি প্রত্যেকের কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। অন্য কারো কথা তিনি বলেননি। যা বলেছেন নিজের কথা। নিজের অনুভূতির কথা। সকলকে তিনি আহবান করে বলেছেন - ঈশ্বরকে ভালোবাসো, ঈশ্বর লাভের জন্য চেষ্টা কর। "
উনবিংশ শতাব্দী হলো ভারতের বিশেষ করে আমাদের এই বাংলায় স্বর্ণযুগ। এ সময় অনেক ধর্মপ্রবর্তক জন্মেছেন। কিন্তু স্বামীজীর ভাষায় বলতে গেলে - তাঁদের কারোরই ভগবান দর্শন হয়নি। সেযুগে একজনই শুধু সোচ্চার হয়ে বলতে পেরেছিলেন - "আমি মাকে দেখেছি, এই তোকে যেমন দেখছি, তোর সাথে যেমন কথা বলছি ঠিক তেমনি।"
ভগবানকে আমাদের জাগতিক বুদ্ধি দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে না। মন ও তাঁকে ধারণ করতে পারে না। তবে যখন অবতার মর্ত্তে নেমে আসেন তখন তাঁর মধ্যে বিশেষ বিভূতি, ঐশ্বর্য্য ও গুণাবলী পরিলক্ষিত হয় যা ভক্তদের আকৃষ্ট করে। সেই জন্যেই বোধ হয় ১৮৩৬ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী, বুধবার কামারপুকুরের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ক্ষুদিরাম ও চন্দ্রামণি দেবীর স্বপ্নকে সফল করে মর্ত্তে অবতীর্ণ হলেন কলিযুগের অবতার পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণদেব। ছেলেবেলায় তাঁর নাম ছিল গদাই বা গদাধর। আর পাঁচটি ছেলের মত পুঁথিগত বিদ্যা তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। সেই কারণে পড়াশুনো তাঁর বেশিদূর এগোয়নি। বরং এই সময় তাঁর হৃদয়ে কেবল ধর্মভাব দেখা দেয়। দিনরাত গ্রামের সাধুদের কাছে বসে থাকতেন আর রামায়ণ, ভাগবত পাঠ শুনতেন মোহিত হয়ে, তাঁর দাদা রামকুমার তাঁকে কলকাতা নিয়ে গেলেন, সংস্কৃত শেখাবার জন্য। কিন্তু তাতেও আনমনা দেখে তিরস্কৃত করায় উত্তরে তিনি বলেন - চাল -কলা বিদ্যায় আমার প্রয়োজন নেই। যে বিদ্যায় পরম বস্তুকে জানা যায় "আমি সেই মিথ্যা চাই। " দাদা স্তম্ভিত হলেন। এরপর রানী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরের পূজারী নিযুক্ত করলেন। সাধারন পুরুতের মতো তাঁর পূজাবিধি ছিলনা। সারাদিন ঠাকুরঘরে পড়ে থাকতেন। নিজের ভাবে তন্ময় হয়ে পুজো করতেন, আর "মা" "মা" বলে কাঁদতেন। তারপর সাধনায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, যেন পুজো তাঁর ঠিকমতো হয়না। শুধু ভাবেন কখন কেমন করে মৃন্ময়ী মা চিন্ময়ী হয়ে দেখা দেবেন। তাঁর মনে হলো মায়ের দেখা না পেলে এ জীবন বৃথা। এ অবস্থায় একদিন মায়ের খড়গ তুলে দেহত্যাগে উদ্যত হলে মা তাঁকে দেখা দিয়ে তাঁর প্রাণ রক্ষা করলেন। এরপর তাঁর সাধন ভজন আরো বেড়ে গেল। সেই খবর মাতা চন্দ্রামণির কানে এলে তিনি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করার জন্য মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু সে সমস্যারও সমাধান ঠাকুর নিজেই করে দিলেন। বললেন তাঁর কুটো বাঁধা আছে জয়রামবাটিতে। নির্দিষ্ট দিনে শুভ কাজ সুসম্পন্ন হলো। কিন্তু তাই বলে সংসার জীবন তাঁকে আবদ্ধ করতে পারলো না। উপরন্তু তিনি তাঁর ধর্মজীবনের আধ্যাত্মিক পথে আরো সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সহায়িকা পেলেন।
এরপর তাঁর তন্ত্র সাধনা শুরু হলো। এই সাধনায় প্রথম গুরুরূপে এলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণী, যার কাছে চৌষট্টিখানি তন্ত্র সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করলেন।পরবর্তী এলেন বেদান্তি সাধু তোতাপুরী। জানা যায় তখন তিনদিনেই তাঁর নির্বিকল্প সমাধি হয়েছিল। সাধনার এখানেই পূর্ণতাপ্রাপ্তি হলো। তাঁর নাম হলো তখন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
পরবর্তী অধ্যায় লোক শিক্ষা। নরেনকে দিয়ে একাজ শুরু করলেন। বললেন - "জীবে দয়া করবার তুই কে ? শিব জ্ঞানে জীবসেবা করতে হবে।" তিনি শ্রীশ্রীমা কেও বলেছিলেন - "তোমাকেও অনেক কাজ করতে হবে। " এভাবেই শুরু হলো তাঁর কাজ।
বসন্ত ঋতু যেমন কোন প্রতিদান না চেয়েই আনন্দ দেয় তার ফুলের সমারোহে তেমনি ব্রহ্মপুরুষও কোন প্রতিদানের অপেক্ষা না রেখে সমস্ত জগতের কল্যাণ কামনায় ব্রতী হন। শ্রীশ্রী ঠাকুর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জগৎ কল্যাণেই নিজেকে ব্যয়িত করেছেন। সকলের বন্ধন মোচনের চেষ্টা করেছেন। তাঁর স্থূল দেহাবসানের পরেও যাতে তাঁর ভাবধারা অব্যাহত থাকে সেজন্য প্রত্যহ তিনি একটা কথা বলতেন - "আমি ছাঁচ তৈরি করে গেলাম - তোরা বেড়ে নে, আমি আগুন জ্বেলে গেলাম, তোরা আঁচ পোয়া।" এই হচ্ছে ঠাকুরের মহিমা। তিনি ছিলেন জগতের আধার। তিনিই প্রথম প্রচার করলেন "যত মত তত পথ।" তিনিই বললেন - যেদিক যাওনা কেন ভগবান একই, গড , আল্লাহ , ঈশ্বর সবই সেই পরমাত্না। এ প্রসঙ্গে ওনার একটা গল্প আছে যদিও তা সকলেরই জানা, তবু বলছি - একবার একটি পুকুরের বিভিন্ন ঘাট থেকে হিন্দু , মুসলমান , ক্রিশ্চান জল নিচ্ছে - কেউ বলছে জল , কেউ বলছে পানি , কেউ ওয়াটার। কিন্তু সবকিছুর সমাধানই জল। এরকমই ছিল তাঁর সর্বধর্মসমন্বয়ের বাণী। তিনি অকপটে বলতেন - "টাকা মাটি মাটি টাকা।" ভগবান লাভের পথে মাটিও যেমন অনাবশ্যক তেমন তোর টাকাও। তিনি বলেছিলেন টাকা মানে অহংবোধ। একে ত্যাগ করতে হবে। তাই তিনি সহজেই টাকাকে নদীর জলে ফেলতে কুণ্ঠা করেননি। তিনি একাধারে ছিলেন দয়াল ঠাকুরও। তিনি আপামর জনতাকে অকাতরে কৃপা করেছেন। নটী বিনোদিনী , মহাত্মা নাগ মশাই ছিলেন তাঁর কৃপা ধন্য। অধম গিরীশকে রক্ষা করতে বারবার তিনি বলেছেন - "মাগো ও অবুঝ ওর দোষ নিওনা।" গিরীশের ক্যান্সার, সেই ভয়াবহ রোগ নিজে বহন করে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। স্বামীজী ছিলেন তাঁর প্রধান শিষ্য এবং তাঁর ভাব আন্দোলনের ধারক ও বাহক। ঠাকুরের নশ্বর শরীর যাওয়ার আগে তিনি কাশীপুর বাগানবাড়িতে স্বামীজিকে ডেকে এনে তাঁর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন। তখন তাঁর সব শক্তি স্বামীজীর ভিতর প্রবেশ করাতে স্বামীজী চৈতন্য হয়ে পড়েন। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে দেখলেন ঠাকুর কাঁদছেন আর বলছেন - "তোকে আজ সব দিয়ে ফকির হলুম রে নরেন !"
কাশীপুর বাগানবাড়িতে তাঁর প্রথম রোগ ধরা পড়ে। ক্রমে তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। তবু কোন ভক্ত দেখা করতে এসে বিফলমনোরথ হয়নি। এই সময় মুহুর্মুহু সমাধিলাভ হয়। ১৮৮৬ সালের ১৬ই আগস্ট মাঝরাতে মহাসমাধিতে নিমগ্ন হলেন। সে সমাধি আজও স্তব্ধ।
তাই অবশেষে বলতে হয় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আর যা কিছু হোন না কেন তিনি সর্বোপরি অসীম।কোন জায়গায় তিনি নন সীমিত। তাঁর সর্বগ্রাহীতা আমরা যেন কখনো আমাদের বিস্মরনের অতলে তলিয়ে না দেই। আমরা যেন না বলি যে ভগবান এইটুকু। তিনি বিশাল, তিনি অসীম , তিনি সমুদ্র। আমাদের এই সীমিত ক্ষুদ্র জীবনে তাঁর অমৃতবারি নিয়ে ধন্য হবো। তাঁর অন্তত জ্যোতিতে আমাদের জীবন আলোকিত হবে। প্রেরণা যোগাবে। তাঁর ঐ শ্রীচরণকমলে আমাদের এই প্রার্থনা রইলো।
জয় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ।
ঊষা ব্যানার্জী






যেকোনো রকম প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে দ্বিধা করবেন না। আমরা সর্বদা আপনাদের সহায়তায় সচেষ্ট।
আপনাদের মূল্যবান মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানাতে নিচে রিপ্লাই বক্সে কম্মেন্ট করুন।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের পরবর্তী পোস্ট প্রকাশিত হলে আপডেট পাওয়ার জন্য। ফলো এবং লাইক করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় , যুক্ত হন আমাদের facebook গ্রুপে। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তী পোস্ট নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি আপনাদের সামনে। ধন্যবাদ।
Please don’t hesitate to ask any question to let us know more about your requirements. We are always there to assist you to make you perform better.

Please comment in the comment box below or give us your valuable feedback.

Subscribe us to get updated & follow us on social media, join our Facebook group. Don’t forget to share with your friends. We will be coming soon with our next post. Thank you.


No comments:

Post a Comment